শান্তিগঞ্জে কর্মশালায় বক্তারা
টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটনের ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে
- আপলোড সময় : ১৯-০৯-২০২৫ ০২:১৩:০১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৯-০৯-২০২৫ ০২:১৩:০১ পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার :: শান্তিগঞ্জে “পরিবেশ, হাওর ও জলাভূমি রক্ষায় যুবদের ভূমিকা” শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এবং স্থানীয় সহযোগী সংগঠন এসভিডিএস, আরডিএসএ ও পদ্মার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় জেলার ১২টি উপজেলার যুব প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালার উদ্বোধনীতে এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, হাওর শুধু একটি ভৌগোলিক অঞ্চল নয়, এটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা, জীববৈচিত্র্য এবং জলবায়ু সহনশীলতার ভিত্তি। যুব সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এই স¤পদ রক্ষা সম্ভব নয়।
কর্মশালা সঞ্চালনা করেন পদ্মার নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন।
কর্মশালায় তিনটি মূল থিম নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। এএলআরডি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার সানজিদা খান রিপা বলেন, প্রস্তাবিত হাওর ও জলাভূমি সুরক্ষা আইন পরিবেশবান্ধব পর্যটন, নেচার-বেজড সল্যুশন, গবেষণা ও ডাটাবেইজ তৈরির কথা বললেও এতে গুরুতর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আইন ভঙ্গের দায়বদ্ধতা ও শাস্তির ধারা অস্পষ্ট, উন্নয়ন প্রকল্পের সংজ্ঞা অনুপস্থিত এবং হাওর-জলাশয় সুরক্ষায় নিয়মিত টহল, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বা র্যাপিড রেসপন্সের কোনো উল্লেখ নেই।
তিনি আরও বলেন, পাঁচটি অধ্যায়ের ২৪ ধারার কোথাও হাওরের বাঁধ নির্মাণের বিষয় নেই। অপরিকল্পিত রাস্তা, কালভার্ট, স্লুইসগেট ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের অভিযোগ বহুদিনের হলেও আইনে এর কোনও উল্লেখ নেই। জলমহাল নীতিমালা ২০০৯-এও নানা গ্যাপ রয়েছে। প্রভাবশালী গোষ্ঠী প্রাকৃত মৎস্যজীবীদের বাদ দিয়ে ইজারা দখল করছে এবং নারী মৎস্যজীবীদের অংশগ্রহণ ও অগ্রাধিকার নেই।
আরডিএসএ’র নির্বাহী পরিচালক মিজানুল হক সরকার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কৃষি উৎপাদনে অনিশ্চয়তা, মাছের প্রজননে বাধা এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বেড়েছে। বৃষ্টির ধারা, নতুন রোগবালাই এবং হাওরের মৎস্য খাতে চায়না জাল, কারেন্ট জাল, প্লাস্টিকের খাঁচা ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যবহার হুমকি সৃষ্টি করছে।
হাওর ও নদী রক্ষা আন্দোলন এর যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হক মিলন পিআইসি গঠনে অনিয়ম এবং গণশুনানির অভাবের বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “পিআইসি ঠিকাদারী ধাঁচে পরিচালিত হচ্ছে। একই ব্যক্তি একাধিক কমিটিতে থাকছে, প্রকৃত কৃষক বাদ পড়ছে। ছোট বিল ইজারার সময় স্থানীয় প্রশাসন ও পঞ্চায়েত দুর্নীতি করছে। তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে এসব অসংগতির তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।”
প্যানেল আলোচকরা হাওরের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তুলে ধরেন। কবি ইকবাল কাগজী বলেন, রামসার সাইট ঘোষণার পরও জীববৈচিত্র্য রক্ষা কার্যকর হয়নি। সুনামগঞ্জ শহরের অধিকাংশ খাল বিলুপ্ত, দুর্নীতির কারণে প্রকৃত কৃষক ও জেলেরা বঞ্চিত।
সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আজিজুর রহমান বলেন, অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ ও বাঁধ উঁচু করার কারণে মাছের চলাচল ও প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটনের ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
পরিবেশবিদ সৈয়দ মহিবুল ইসলাম বলেন, যুব সমাজকে সচেতন ও সংগঠিত করে হাওরের প্রাকৃতিক স¤পদ রক্ষা করতে হবে। পাখি ও মাছের জন্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও পর্যটন চাপ কমানো জরুরি।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আরশাদ উল আলম বলেন, বড় স্কেলের ড্রেজিং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ছোট আকারের ড্রেজিং, ফিশ-পাস খোলা রাখা, নন-ফিশিং জোন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ।
মুক্ত আলোচনায় যুব প্রতিনিধিরা হাওরের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেন। তারা বলেন, হাওরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
আয়োজকরা জানান কর্মশালার আলোচনার মূল বার্তা হলো- তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ, হাওর ও জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য যুব সমাজের সংগঠিত অংশগ্রহণ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ। অংশগ্রহণকারীরা শিখেছেন, সুশাসন নিশ্চিত করতে আইনগত ও কমিউনিটি ভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব। এভাবে, সুনামগঞ্জে যুব সমাজকে কেন্দ্রে রেখে হাওর ও জলাভূমি সংরক্ষণের লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ